নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামীকাল ৮ মে গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। তবে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মানেই সহিংসতা ও খুনাখুনির ঘটনা । বিগত উপজেলা নির্বাচনেও এই উপজেলায় একাধিক খুনসহ রক্তারক্তির ঘটনা ঘটেছে। এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে জেলার শীর্ষ নেতাও জড়িয়ে পড়েছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, গজারিয়া উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৬০টি ও বুথের সংখ্যা ৩৭৮টি।নির্বাচনে ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও ৫ প্লাটুন বিজিবি, ৪ প্লাটুন র্যাব, ৪১ জন নৌপুলিশ এবং ৯টি মোবাইল টিম মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৭/১৮ জন পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
গজারিয়া উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৪৬টি। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৫ হাজার ৯৪৬ জন ও নারী ভোটার ৭১ হাজার ৩শ’ জন।
এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়াম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনটি পদেই দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম (প্রতীক আনারস), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ খাঁন জিন্নাহ (কাপ পিরিচ), উপজেলা যুবলীগ নেতা ও প্রার্থী আমিরুল ইসলামের ভাতিজা আবুল বাসার সজল(ঘোড়া) এবং তার ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আশরাফুল ইসলাম আকাশ (দোয়াত কলম)। এই নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ খাঁন জিন্নাহ’র মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলামের সমর্থনে রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। অন্যদিকে মনসুর আহমেদ জিন্নাহ’র পক্ষে আছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা, জিন্নাহর ভাই কেন্দ্রিয় যুবলীগ নেতা মো. হাফিজ খানসহ অনেকেই। রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের অনুসারি। এইসব বিবেচনায় স্থানীয়দের ধারণা আমিরুল ও জিন্নাহ মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নেকী খোকন (প্রতীক চশমা), ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাইফুল ইসলাম মন্টু (টিউবওয়েল), স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুনায়েত হোসেন মনির(তালা) ও মনসুর আলম (বই)। এদের মধ্যে আতাউর রহমান নেকী খোকন ও সাইফুল ইসলাম মন্টুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা আক্তার আঁখি(প্রতীক পদ্মফুল), কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী মেহেরুন নেছা উত্তরা(কলস), উপজেলা যুব মহিলা নেত্রী নুসরাত জাহান মিতু (হাঁস) ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মোসাম্মদ মীনা আক্তার মিনু (ফুটবল)। এসব প্রার্থীদের মধ্যে খাদিজা আক্তার আঁখি ও মেহেরুন নেছা উত্তরার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে এলাকার ভোটারদের ধারণা।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও গজারিয়া উপজেলা নির্বাচনের রির্টানিং অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমেদ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। এরপরেও কোন কেন্দ্রে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় প্রয়োজনে ওই ভোট কেন্দ্র স্থগিত বা বন্ধ রাখা হবে। নির্বাচনে কোন ধরণের প্রপাগান্ডায় ভোটারদের কান না দেয়ার জন্য বলেন।
উল্লেখ্য : প্রথমধাপে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো।
এই উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর পর পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ দুইটিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। এখানে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মো. আনিছুজ্জামান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হোন। আনিছুজ্জামান জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই ও তার ছেলে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের চাচা। এখানে এই পরিবারের হস্তক্ষেপের কারণে অন্য প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গেলে চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদের প্রার্থীরা বিনাভোটে জয় পায়। ফলে আগামী ৮ মে সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে না।